বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫২ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ ঝড় ও বৃষ্টির সময় বিভিন্ন এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনায় যেমন আতঙ্ক বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃতদেহ চুরির আতঙ্ক। অনেকে বিশ্বাস করেন, বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তির মরদেহ, কঙ্কাল বা অস্থি কবিরাজী চিকিৎসাতে অনেক মূল্যবান।
এই মতকে বিশ্বাস করে বজ্রপাতে নিহত কলেজ শিক্ষার্থী দাফনকৃত মরদেহের অস্থি চুরি যেতে পারে ভেবে রাত জেগে কবর পাহারা দিচ্ছেন স্বজনরা। তিন মাস ধরে এই পাহারা চলবে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
কবরটি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা গ্রামের ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামের অধিবাসী আরিফুল ইসলামের। সফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম (১৮) গত মঙ্গলবার (১ আগষ্ট) সকাল ৯টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে নীলকোমল নদী থেকে সেচের জন্য পানি তোলা মেশিন বন্ধ করতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যায়। পরে ঘোগারকুটি এলাকার বাড়ির পাশে তার মরদেহ দাফন করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফুলবাড়ী থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে মৃত আরিফুলের মামা হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, তার বোন রাহিলা বেগমের সাথে সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কুমোরপর কদমেরতল এলাকার শহিদুল ইসলামের বিয়ে হয়েছিল। এই দম্পতির ৩ ছেলেমেয়ের মধ্যে আরিফুল ছিল সবার বড়। এ অবস্থায় স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে সন্তানদের নিয়ে ঘোগারকুটি গ্রামে পিতা আজগার আলীর বাড়িতে চলে এসে বসবাস করতে থাকেন। রাজমিস্ত্রীর যোগালীসহ নানান কায়িক শ্রমের কাজ করে ৩ সন্তানকে লালনপালন করতে থাকেন। এরপর আরিফুল এসএসসি পাশ করার পর রাহিলা বেগম তার ৩ সন্তানকে পিতার বাড়িতে রেখে কাজ নিয়ে চলে যান জর্ডানে। ফলে নানার বাড়িতে থেকে লেখাপড়াসহ লালিত পালিত হচ্ছিলেন আরিফুলসহ ৩ ভাইবোন।
তিনি আরও জানান, তার বোন রাহিলা বেগম জর্ডান থেকে টাকা পাঠিয়ে তাদের বাড়ির সাথে ১৬ শতাংশ জমি কিনেছেন বাড়ি করার জন্য। সেই জমির একপাশে আরিফুলের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
মামা হাফিজুর রহমান আরও জানান, তারা যুগ যুগ ধরে শুনে আসছেন কবিরাজী চিকিৎসায় বজ্রপাতে নিহত ব্যাক্তির মরদেহ, কঙ্কাল বা অস্থি অত্যন্ত মূল্যবান। এ কথা তার বিশ্বাস করেন। এজন্য লাশ চুরি ঠেকাতে কবরের পাশে তাঁবু টানিয়ে তার নিচে চৌকি বিছিয়ে রাত জেগে পালাক্রমে কবর পাহারা দিচ্ছেন স্বজনরা। এই পাহারা ৩ মাস চলবে।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, কবর পাহারা দেওয়ার ঘটনাটি শুনেছেন। প্রচলিত যে ধারণায় তারা কবর পাহারা দিচ্ছেন তার কোন ভিত্তি নেই। কুসংস্কার মাত্র।
Leave a Reply